সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

গুরুচণ্ডালী

🔘গুরুচণ্ডালী🔘 বলুন তো দেখি, গুরুচণ্ডালী রহিয়াছে কিন্তু শিষ্যচণ্ডালী নাই কেন? আছে, ইহার বিশাল হেতু আছে। তাহা পরে বলিব, আগে বলুন, গুরুচণ্ডালী বলতে আপনারা কী বুঝিতে পান? এক্ষণে ঠাস করিয়া কেহ কেহ উত্তর করিবেন, সাধু ও চলিতে ভাষার সংমিশ্রণ তথা আপনার উপরের বাক্যে ‘বলিতে’ না লিখিয়া যে ‘বলতে’ লিখিয়াছেন, অথবা ‘বুঝতে’ না লিখে যে ‘বুঝিতে’ লিখেছেন, তাহাই গুরুচণ্ডালী। কিন্তু ইহাতে আমার ঢের আপত্তি রহিয়াছে। অভিধানবেত্তাগণ গুরু শব্দে অর্থ করিয়াছেন ‘পূজনীয় ব্যক্তি’। এইখানে পূজোর অর্থ ইবাদত করিয়া আমার তুলতুলে নরম বদনে শিরকের গন্ধ লাগাইয়া দিয়েন না আবার। যাহাকে অনুসরণ-অনুকরণ করা যায়, যিনি অনুকরণীয়, তিনিই হাকিকতে গুরু। চণ্ডালী শব্দের অর্থ খুঁজিতে গিয়া অভিধানে পাইলাম, ‘চণ্ডাল জাতের বা বংশের রমণী’। পূজনীয় ব্যক্তির সহিত চণ্ডাল জাতের রমণীকে বাঁধিয়া কোন হেতু ইহাকে সাধু-চলিত রীতির মিশ্রণের নাম বলিয়া অভিধানবেত্তাগণ ধার্য করিয়াছেন, তাহা আর অনুসন্ধান করিয়া পাইলাম না। যাহারা সুপণ্ডিত, তাহারা বলিবেন, গুরুরা যাহা বলিয়া গিয়াছেন, তাহা শ্রবণ কিংবা পঠন করিয়া তাহাদের মত করিয়া তাহাকে জানিতে কিংবা চিনিতে হইবে। সুতরাং এক্ষ...

শির্কের আড্ডাখানা ৬

শির্কের আড্ডাখানায় একদিন (৬) খাওয়া শেষ। যুক্তির কথা বাদ দিই। একদিকে কুরআনে আল্লাহর নির্দেশ, অপরদিকে হাদিসের স্পষ্ট নস। আর মুখ ফুটানোর সাহস হলো না। হাত-মুখ ধুয়ে আবার দাঁড়ালাম৷ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারীর কবরের সামনে। দেয়ালে আরও কিছু লেখা। একটা একটা পড়ার চেষ্টা করছি। “তুমি যখনই আমার প্রতি তাকাও, আগ্রহান্বিত হও, আগাইয়া আসো, আমি মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী—তোমার জন্য দুআ করি। আর যখন বিমুখ হও-পেছনে তাকাও, আমি তোমার জন্য কাঁদি। যেহেতু পশ্চাৎ দিক থেকে কোনোকিছু দেওয়া ও নেওয়ার নিয়ম নাই।” —পীরানা পীর আবদুল কাদের জিলানী... পেছন দিক থেকে আসলেই দেয়া-নেয়া যায় না। সামনে যেতে হয়। চায়তে হয়। লেনদেনে  ভাবের আদান-প্রদান লাগে। না-হলে হয় না। ব্যাপারটা দারুণ। হৃদয়ে গেঁথে রাখার মত। আগানো যাক। “তুমি সম্মুখে থাকিয়া যদি স্মরণে বিচ্যুত হও, তবে তুমি ইয়ামেন দেশে। আর যদি ইয়ামেনে থেকেও স্মরণে বিচ্যুত না-হও, তবে তুমি আমার সম্মুখেই।” —গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.)। জ্ঞানগর্ব কথা। প্রেমাস্পদের অব্যক্ত শব্দমালা। ব্যাপারটাতে প্রবল প্রীতির গন্ধ আছে। কথাগুলো আমাকে মোহিত করে চলেছে। অজানা মোহে পড়ে যেতে লাগলাম। ...
সেই যে কথা হয়েছিল...  সেই যে ভেসেছিলাম মোহনীয় কণ্ঠে তার, চলে গেছে কত প্রহর, কত দিন, শোনা হয় না আর। কত নিশি পার হলো ভেবে ভেবে— এই বুঝি তার কণ্ঠ শোনা যাবে। আজ-ই বুঝি আসবে কথার জাদুতে ভাসাবে— আমার মন-প্রাণ সবে। ভেবেছি,  প্রহর থেকে প্রহর শেষ হয়েছে। আশায় বুক বেঁধেছি— ঝরনাধারার মত কলকল শব্দে  আমি ভিজবো রাতভর, তটিনীর ছলছল ঢেউয়ের মত ভেসে যাবো তার নির্মল কণ্ঠের স্রোতধারায়। অনুভবে শূন্যে ঘুরে বেড়াবো তার মায়াবী কণ্ঠে ভেসেভেসে। হয়নি; সে আশার দরিয়া শুকিয়ে গেছে। শুকোবে নাই বা কেন?  তটিনী যে জেদ ধরেছে, একটি জোয়ারও এ পাড়ায় আর মাড়ায় না। মায়াবিনীর সে চেহারা! কত অনুনয় গেল,  কত অনুরোধ করা হলো— মিললো না। সে এক আরাধ্য বস্তু।  শত আরাধনায়ও মিলে না। বুকে ফেটে যাক,  কলিজা ছিঁড়ে চৌচির হয়ে যাক, কাঁদতে কাঁদতে  বালিশের অর্ধেকটা ভিজে যাক, তবু মিলবে না। রূপসী তার সিদ্ধান্তে একচুলও নড়বে না। অতপর, সাতরাজার ধন,  মায়াবী সে বদনখানি দেখা হয় না— সে বহুকাল আগে থেকেই। আবেদন যায়—দেখবো। জবাব আসে—দেখেছেন তো! আচ্ছা, বলো তো, চাঁদকে মানুষ  এক জনমে কতবারই না দেখে। তবু কি স্বাদ মিটে? চ...

শির্কের আড্ডাখানা ৫

শির্কের আড্ডাখানায় একদিন (পর্ব-৫) মাথা কোনোমতে বাঁচা গেল। কিন্তু পরাণ যায়-যায় অবস্থা। একটা ভুলকে আঁকড়ে বেঁচেছি এতকাল? এ নিয়ে কতো বাড়াবাড়ি-ই না করলাম। না না, আমার-ই বোধয় ভুল হচ্ছে। নিশ্চয় এর ভিন্ন ব্যাখ্যা থাকতে পারে। —এখানটাই বসুন। —জী? ওহ হ্যাঁ, বসছি। ভিন্নজগতে চলে গেছিলাম। খাদেমের বসতে বলায় হুশ এলো। —আপনার কি শরীর খারাপ? —জী না, মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো হঠাৎ। —আপনাকে বেশ বিব্রত মনে হচ্ছে। এই নিন, পানি খান।  মুহূর্তেই ডগডগ করে গিলে ফেললাম। লম্বা করে একটা নিশ্বাস। ভেতরে বায়ুর ঘাটতি ছিল। পুষিয়ে নিলাম। প্রাণটা ফিরে এলো। —আপনি কি খেয়েছেন? খাদেমের প্রশ্ন। —না, খাওয়া হয় নি এখনও। আসুন, মহিষের গোশত দিয়ে বিরানি রান্না হয়েছে। দুজনে একসাথে খাই। ভালো লাগবে। পেটে ক্ষুধা ছিল। ভদ্রতার খাতিরে না করলে না-খেয়ে মরা লাগবে। আগাতে গিয়ে থেমে গেলাম। চাচা, শুনুন— —জী, বলুন। —আমি খাবো না, আপনি যান। —হঠাৎ সিদ্ধান্ত চেঞ্জ। কারণ? —আপনারা পীরের নামে জবাই দেন। ওগুলো খাওয়া যায় না, হারাম। মলতুল্য। —এ কথা কে বললো? (ঈষৎ হাসি) —জানি আমি, শুনছি। শফি সাব হুজুর বলেছেন। —ঐ যে, কাকটা দেখেছেন? আপনার কান নিয়ে পালাচ্ছে। ধরুন ...

ঢাকার চাকা

ঢাকার চাকা মুহাম্মদ সৈয়দুল হক জ্যামের ফ্রেমে এমন ছবি দেখবি যদি আয় ইটপাথর আর ধূলিবালির এই যে ঢাকার গা’য়। চাই দূরে যাও কিংবা কাছে লাগবে কতক্ষণ? জবাবটা চাও জ্যামের কাছে— থাকবে কতক্ষণ? টেক্সি পিক-আপ মাইক্রোবাস হোক না যতই যা লাইন লাগিয়ে রিক্সার পিছে যা-রে দেখে যা। ভিআইপিদের ভাবমারা আর মটরের হাঁকডাক সাম্যবাদের এহেন খেলায় যাকরে ভেসে যাক। লেখক যারা ডায়রি নিয়ে বসে যাও এক্ষণ এই সুবাধে যাওরে রচে স্বাদের সেই লেখন। পড়ার লাগি নবেলটা তোর হয়নি পড়া যেই— এই তো সময় পড়ে নেয়ার এই তো সুযোগ সেই। পথিকরে তোর হইতো কি রাগ চাকার গতি দেখে দেখা এবার তোর গতিবেগ কে তোরে আর রুখে। ও ভাই পুলিশ কষ্ট কি খুব রাস্তা সামাল দিতে? নাও জিরিয়ে খাওরে পোলাও ‘সোনার গাঁ’য়ের পাতে ভ্রাম্যমাণ ঐ হোটেল মোটেল ঢাকার পথে ছুটো জ্যাম-সুবাদে শতের বদল হাজার টাকা লুটো। ক্লিনিক-সেবা চলবে চাকায় সুলভ ও সহজেই ইমার্জেন্সি কেস যত, সব সারবে পথের মাঝেই। জ্যামের ঠেলায় খেই হারিয়ে যেই না বমি হবে না-থাকলে ভাই তোমরা পথে কে দেয় সেবা তবে। জ্যামের এসব সুফল ভোগে না-হইলে তৎপর ভাগ্য ক্যামনে ফিরবে বলো বাঙালির এই ঘর। সোনার বাংলা হোকরে তামা বলছি হেসেহেসে ঢাকার সুনাম...

শির্কের আড্ডাখানা ৪

শির্কের আড্ডাখানায় একদিন (পর্ব-৪) মিলাদ-কিয়াম-মোনাজাত শেষ। সবাই মাজারের দিকে ছুটছে। আমি একপাশে শক্ত করে দাঁড়ালাম৷ শক্ত করে বলতে কোমর বেঁধে। মাহেন্দ্রক্ষণে বোধয় এসে পড়েছি। এবার নিশ্চয় পূজো শুরু হবে। দেখি কী হয়। চতুর্দিক থেকে মাইকের আওয়াজ শুরু। চতুর্দিক থেকে বলতে (সম্ভবত) যতটা মাজার আছে ততদিক থেকে।  “আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আর রাহমানির...।” পূজোর শব্দগুলো পরিচিত মনে হচ্ছে। কোথায় যেন আছে?আরিব্বাস! এ তো সুরা ফাতেহা। পূজোয় সুরা ফাতিহা পড়া হয় জানা ছিল না। আজ প্রথমবার জানলাম। বাহ! এই না-হলে পূজো! পূজোর সিস্টেম এত দারুণ হলে তো পূজো-ই ভালো। কেন জানি আমারও পূজো দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল।  সামলালাম নিজেকে। কানপেতে শুনে আছি৷ সুরা ফাতিহা শেষ, সুরা ইখলাস শুরু। শুরু যে হলো আর বোধয় শেষ নেই। ইয়াসিন, আয়াতুল কুরসি, দরুদ শরিফ। একের-পর-এক চলতেই আছে। এরা কি আজ থামবে না? না, থামলো। বেদাতটা আবার শুরু হইছে। “ইয়া নবি সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম...” মনে হঠাৎ প্রশ্ন জেগে উঠলো, এরা তো নবিকে সালাম দিচ্ছে। সে তো আমরা ‘নামাজের মধ্যে’ প্রতিদিন-ই দিই! “আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়ু...” আচ্ছা, সাহাবি-তাবেয়...

শির্কের আড্ডাখানা ৩

শাপলা ফুলের মাজারটা বরাবর দাঁড়ালাম৷ দারুণ কারুকার্য। অনিন্দ্য শিল্পকর্ম। না-জানি কোন কারিগরের দক্ষতা! খরচা যে প্রচুর পড়েছে—তা নিশ্চিত। এত টাকা মাজারে খরচ না-করে গরীব-দুখিদের দিলেই পারতো! যত সব আকামের কাম—ভাবতে ভাবতে চোখটা একটা বাক্সে এসে থেমে গেল। বাক্সে লিখা, “আপনার প্রদত্ত হাদিয়া দুঃস্থ মানবের সেবায় ব্যয় হয়”। চোখ কপালে উঠে উঠে অবস্থা।  আনমনে দুয়েক কদম পেছনে যেতেই ধাক্কা। ভদ্রলোককে স্যরি বলতে যাবার আগেই—ইট্স ওকে। উল্টো প্রশ্ন—আপনার লাগেনি তো?  –না না, আমার লাগেনি। তখনও বাক্সের লেখাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। না-চাইতেই বলে বসলাম—দাদা, একটা জিজ্ঞাসা ছিল... –ভদ্রলোকের সহাস্য উত্তর: জ্বি বলুন। –ইয়ে মানে, দানবাক্সের ঐ লেখাটার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছিলাম। –পাশের ৬তলা মাদরাসাটা দেখেছেন? –গলাকে খানিকটা পূর্বদিকে টেনে পড়ার চেষ্টা করলাম। বড়ো করে একটা সাইনবোর্ডে লিখা—”মাদরাসা-এ গাউসুল আআজম”। ওটার কথা বলছেন? –হ্যা, ওটা-ই। এ মাজারওয়ালার নামে যে ট্রাস্ট আছে, সে ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত। মানে এই বাক্স যারা লাগিয়েছে, তারাই পরিচালনা করে। আপনার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি যে, এ সংস্থা ও এখানকার অন্যান্য স...

শির্কের আড্ডাখানা ২

অত ভেবে কাজ নেই। সামনে আগানো যাক। দুকদম যেতেই থ। মসজিদ। তাও আবার চার তলা। সবেমাত্র ১২টা ১৫ বাজে। মৌলানা সাব বয়ান করছেন। মসজিদ ইতোমধ্যেই ফুলফিল। ভাবছি... পূজা হয় জানতাম, এখন দেখছি নামাজও হয়। কানাই বাবুর কথার সাথে মিলছে না। ঘাবলা আছে।  মসজিদে জায়গা মিললো না৷ রাস্তায়ও চাটাই পেতে কাতার পূর্ণ। ঘাড় ঘুরাতেই শাপলা ফুল আকৃতির একটি মাজার। দুপা এগোলাম। একটা লেখায় চোখ আঁটকে গেল। “হালাল খাও নামজ পড়ো, আল্লাহ আল্লাহ জিকির করো; সব সমস্যা মিটে যাবে।” বাণীতে বিশ্বঅলি জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী। বাক্যটা পরিচিত মনে হচ্ছিল। কোথায় যেন পড়েছি। পূর্বদিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে করার চেষ্টা করলাম। মনে পড়লো না। খোঁজাখুঁজি করে একটা পার্ফেক্ট জায়গায় বসে পড়লাম। এর-ই মধ্যে মাওলানা সাবের বয়ান জমে ওঠেছে। একের-পর-এক কুরআনের আয়াত বিবৃত করছেন। “হে ইমানদারগণ! খাও, আল্লাহপ্রদত্ত রিজিক হতে; যা পবিত্র(হালাল। যা অপবিত্র, তা হালাল নয়)। এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমার প্রকৃতপক্ষে তাঁর ইবাদত করো–সুরা বাকারা-১৭২।” “তোমরা আমার জিকির করো, আমি তোমাদের উত্তম প্রতিদান দেব—বাকারা-১৫২। “তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই বাড়িয়...

শির্কের আড্ডাখানা

শির্কের আড্ডাখানায় একদিন কানাই বাবু তার ছেলেকে বকছেন। গালমন্ধও চলছে উচ্চস্বরে। থামাথামি নেই, যাচ্ছেতাই বলে চলেছেন। ঐটা শির্কের আড্ডাখানা। ঐহানে সব শির্ক আর বেদাত। দিনরাত পুজা অয়। ক্যান গেছস? কার পারমিশনে? ভবিষ্যতে গেলে ঠ্যাঙ ভাইঙ্গা দিব। প্রয়ওজনে ঘরে বসাইয়া খোঁড়া পালবো।  বসে বসে চিনা-বাদাম চিবুচ্ছিলাম। কানাই বাবুর গর্জন শোনে ইচ্ছে জাগলো—শির্কের আড্ডাখানাটা একটু দোখে আসবো। সিদ্ধান্ত নিলাম। আজ না-হয় কাল যাবোই। গিয়ে একবার দেখে আসবো। শির্কের সে আড্ডাখানার হাল-হালত কীরূপ। কতটা জঘন্য তারা। আল্লাহ বাদ দিয়ে মানুষ-পুজা? হায় আপসোস! নিয়ত করলাম। নিজ চোখেই দেখে আসবো। সুযোগ-সুবিধে পেলে দুয়েকজনকে তাবলিগের পথে আহ্বান জানাবো। শুক্রবার ছুটির দিন। এ দিনটাই পারফেক্ট। ১০টা নাগাদ বের হলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা। অক্সিজেন মোড়ে যেতেই এক কন্ট্রাক্টরের চিল্লানি, ‘দরবাড্ডায়েক, দরবাড্ডাইয়েক’। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলাম—এটা কোন জায়গা? আগে তো নাম শুনিনি। বলেন কী মিয়া, দরবারের নাম শুনেননি? আরে মাইজভাণ্ডার যাবে, মাইজভাণ্ডার।  বাসে চেপে বসলাম। দরবাড্ডায়েক আর মাইজভাণ্ডারের হিসাব কিছুতেই মিলছিল না। কন্ট্রাক্টর আবারও চে...

শিষ বেরোলো ঐ

শিষ বেরোলো ঐ দাদা ডাকে তার নাতিকে— ও দাদুভাই কই দেখে যারে ধানের গাছে  শিষ বোরোলো ঐ ফোকলা দাঁতে নাতি মাতে শিষ দিয়ে কী হয়? খেলা যায় কি ‘ছালন খেলা’ খেলনাপাতি লই? বলে দাদু না-রে বুড়ো ছালন-পালন নয় পাকলেরে ধান তা ফুটিয়ে খাবি ধানের খই। আচ্ছা দাদু, দুমাস আগের কথা মনে আছে? পান্তাভাত আর লবণ মরিচ নিতাম বিলের কাছে। তোমরা সবে ধান রুপিতে  গোজ মেরে কোমরে দাদির দেয়া ভাতের হাঁড়ি নিতাম মাথায় করে। পান্তা পেয়ে সে কী তোমার হুশ থাকিতো আর আইলে বসে গামলাসহ করতে যে সাবাড়। হেহ হেহ হেহ হাসে দাদু, গাল টেনে কয় বুড়ে— আমি কিরে একলা খেতাম দিতাম না কি তোরে? আইলে বসে খেতাম যখন তপ্তরোদে পুড়ে আদর করে কে খাওয়াতো মুটোয় মুটোয় পুরে? মা-রে ওমা সে কী কথা! বলছি কী তাই আমি— আমরা দুজন বন্ধু বলে  খাওয়াই দিতে তুমি। থাক সে কথা পরে হবে আগে বলো ভাই— শিষ বেরোলে খইয়ের সাথে আর কী খাওয়া যায়? খাবি না-হয় অনেক কিছু  পাকতে আগে দে তার পরেতে কেটে সবি উঠান ভরাবে। তোর  দাদী-দিদি মাসি-পিসি  সবে মিলেমিশে করবে হরেক স্বাদের পিঠে তামার পাড়ায় পিসে। পিঠের কথা শুনতে দেরি নাতির লাফ কে দেখে এই যেন সেই খাচ্ছে পিঠা খেজুর রসে মেখে...

যদি বৃষ্টি হতো

যদি বৃষ্টি হতো –অনামিকা যদি বৃষ্টি হতো... কল্পনায় গল্প বাঁধতাম। কপালে একটা নীলচুমু এঁকে দিতাম। মাথা ঠিক পাশে বসে বিভোরচিত্তে  তোমার ঐ খোলা চুলের গন্ধ নিতাম। ঐ চুলে হাজারো পদ্মের সুগ্রাণ-সুমধুর, অপলক নয়নে দেখি সে বিধুর-সুচিত্রা। ঐ চোখ... আমি হাজার বছর ধরে ঐ চোখের জালে আঁটকে যেতে চাই। আমায় আঁটকে রেখো,  দৃষ্টির গতিপথ যেন পাল্টে না-যায়– আমি মরে যাবো। আমি বাঁচতে চাই,  ঐ চোখে কোণে এঁটে যেতে চাই।  তুমি চোখ বন্ধ করো না–পলক ফেলে না– আমি অনন্তকালের জন্য হারিয়ে যাবো। হাসির ঝিলিকটা যেন- মহাকাশ ফুঁড়ে আসা শত চাঁদের কিরণ। আমায় বন্ধি করো,  সে জ্যোৎস্নায় স্নাত হতে চাই। যদি বৃষ্টি হতো... গভীর রজনীর এ প্রেমাতুর মনে  চুলের ঠিক গোড়ায় ললাটমাঝে এঁকে দিতাম–মোহনীয় নীল চুম্বন।  তুমি অনুভবে খোঁজে নিতে...?

অনামিকা তুমি

যার তরে মন প্রহর গুনিস  সে কি তোরে ভাবে রাতি কিরে যাবে অ তোর একাকী নিরবে... যার কথা মন শুনবি বলে বায়না ধরিস শত তার কাছে কি আছে সময় তোকে দেবার মত... পৌঁছে কিরে তার দুয়ারে মনের গহীন ধ্বনি মুখাবয়ব দেখার তরে ও তোর ছটফটানি...

সে কি বুঝে

যার তরে মন প্রহর গুনিস  সে কি তোরে ভাবে রাতি কিরে যাবে অ তোর একাকী নিরবে... যার কথা মন শুনবি বলে বায়না ধরিস শত তার কাছে কি আছে সময় তোকে দেবার মত... পৌঁছে কিরে তার দুয়ারে মনের গহীন ধ্বনি মুখাবয়ব দেখার তরে ও তোর ছটফটানি...

শূন্যতা

শূন্যতা একাকী হাঁটছিলাম,  বুকে-মুখে শূন্যতা। কেবল বুকে-মুখে না, সবটায়।  চরম শূন্যতা... চাঁদের মত ক্ষুদ্রক্ষুদ্র  কালো দাগ পড়েছে মনের একপাশে। অপর প্রান্তে সূর্যের উত্তপ্ত রশ্মি  মগজে উপত্যকা, তিনপাশ পাহাড়ে ঘেরা, একপাশে চিনচিনে জলের রাশি। অদ্ভুত! চোখ দিয়ে না-ঝরে মগজে ঝরছে। কোথাও ঝরনাধারা, কোথাও বা অগ্নিকুণ্ড।   এক দেহে এত রূপ–বিস্ময় জাগানিয়া। হঠাৎ হাতের স্পর্শ।  শিমুলের মত তুলতুলে কোমল হাত। আঙুলের ফাঁকগুলো পূর্ণতা লাভ করেছে।  হাঁটছি... ভালো লাগছে চরম। সাইমুন আর ঝরনাধারা বিশ্রামে গেছে, শীতল হাওয়ার আগমন।  স্নিগ্ধ সকালের সেই মায়াবেশী হাওয়ার মতন। জড়ায়ে ধরেছি তবু হাতদ্বয় আপন জায়গায় স্থির। মোহের সমুদ্রে নিমজ্জিত কত-ক্ষণ কত-যুগ ছিলাম জানা নেই। হঠাৎ আঁচ করি, বুকের মাঝে কেউ নেই। আঙুলের ফাঁকে অপর আঙুলগুলো আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হলাম। ডানে-বামে খোঁজাখুঁজি বেশ, কোথাও যে কেউ নেই। তবু আছে একজন, অন্তরালে-অধরা। চিরসাথী আমার... শূন্যতা!